পোস্ট ১ঃ
ডাক্তাররা একমত হবেন কিনা জানি না, তবে আমার মতে রোগ নিরাময়ের প্রথম এবং সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল, রোগ নির্ণয়। যে যত ভালভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারবে সে তত ভাল চিকিৎসক হবার সম্ভবনা থাকবে।
কাজেই আমাকে কেউ যখন বলে, ভাই আমি বদনজরে আক্রান্ত, জাদুতে আক্রান্ত, আশিক জিনে আক্রান্ত তখন আমি বিরক্ত হই। আপনার কি হয়েছে সেটা যদি আপনি জানেনই তাহলে আর আমার কাছে জিজ্ঞেস করার কি আছে। আপনি চিকিৎসা শুরু করেন। মূলত রুকইয়াহ কোনটা করবেন এটাই তো? আপনি যদি জানেন আপনি বদনজরের রোগি, আপনি বদনজরের চিকিৎসা শুরু করেন। আমার পারমিশনের দরকার নেই।
একসময় এই বিরক্তি আমি প্রকাশ করতাম। এরপর জিজ্ঞেস করতাম সমস্যা কি সেটা বলেন। এখন আর জিজ্ঞেস করি না, বলে দেই এটা করেন, ওটা করেন।
কেউ কেউ ফোন করেই বলেন, আমার বদনজরের এই এই লক্ষন মিলে, জিনের ঐ ঐ লক্ষন মিলে, জাদুর থেকে এই এই মিলে। আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনার সমস্যা কি সেটা বলেন। কেউ কেউ বলতেও পারে না। তার সমস্যাই হল লক্ষন মিলে এত এত। আচ্ছা, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের লক্ষনগুলো দেখেন। সেখানেও আপনার কয়েকটা মিলবে। তাহলে কি আপনি ক্যান্সারের রোগি?
ফোন করার আগে, নক করার আগে নিজের সমস্যাগুলো খেয়াল করেন। শারিরিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, আত্মীক সমস্যা, মানসিক সমস্যা সব নোট করেন। এরপর ফোন করেন, আপনারও সময় লস হবে না, আমারও সময় লস হবে না।
কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, অমুকে কবিরাজের কাছে যায়, ক্ষতি করে। তার ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় কি? অদ্ভুত প্রশ্ন। উত্তর অদ্ভুতই হবে। অমুকে যদি কবিরাজের কাছে যায়, তাকে আটকান। তার বাংলা ট্রিটমেন্ট দেন। তাহলেইতো আর যাবে না। অথবা কবিরাজের গ র দা ন উ ড়ি য়ে দেন। কবিরাজ নাই, কবিরাজিও নাই। সহজ সমাধান।
এসব বললে বলবেন, না, না এটা সম্ভব না। অন্য কিছু বলেন। তাহলে প্রশ্ন যেটা করার দরকার সেটা করেন। যেটা পারবেন না সেটা জিজ্ঞেস করবেন কেন!
পোস্ট ২ঃ
আশিক জিন পরিভাষাটা বদল হওয়া দরকার। আশিক না ভিলেন বুঝবো কিভাবে? বখাটেও তো হতে পারে। চিন্তার বিষয়। কেউ যখন বলে আশিক জিনের সমস্যা – তখন আমার মনে প্রশ্ন আসে, আচ্ছা সে তো নিজের সমস্যা জানেই তাহলে এখানে বলছে কেন? গ্রুপে পোস্ট দেখে ফলো করতে থাকুক। সমস্যা নির্ণয় করাটাই মূল কাজ, পরামর্শ তো পরের বিষয়।
সমস্যাই যদি কেউ নির্ণয় করতে পারে তাহলে সাজেশন ফলো করলেই হয়। সেলফ রুকইয়াহ গাইড তো এই কারণেই লেখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরামর্শক দরকার নেই। সেলফ রুকইয়াহ করতে না পারলে রাক্বির কাছে যাবে। হিসাব অতি সহজ।
একইভাবে কেউ যদি বলে আমার বদনজরের সমস্যা, আমার জিনের সমস্যা, আমার জাদুর সমস্যা – আমার মনে একই প্রশ্ন আসে। কেউ কেউ আবার এক ডিগ্রী আগে বেড়ে যায়। আমার জিনের নজরের সমস্যা, আমাকে পড়ালেখা নষ্টের জাদু করা হয়েছে, বিচ্ছেদের জন্য তাবিজ করেছে ইত্যাদি। একটা সময় এসব বললে জিজ্ঞেস করতাম।
কিভাবে বুঝলেন?
তখন কোনো সদুত্তর আসে না। ঘাটলে দেখা যেত তার সমস্যা হয়ত যেটা ভাবছে তা নয়। আচ্ছা, ডাক্তারকে কাছে গিয়ে যদি বলি আমার জন্ডিস হয়েছে মেডিসিন দেন। তাহলে ডাক্তারের কী করা উচিত? বা এই কথাটা বলা কতটুকু যৌক্তিক। আমি যদি জানি-ই আমার জন্ডিস হয়েছে তাহলে তাহলে ফার্মেসিতে গিয়ে মেডিসিন কেন কিনে নিচ্ছি না। এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাই না। চুপচাপ লিংক দিয়ে দেই নাহয় ইগনোর করি। যেটা বলেছে সেটাই। কুরআন তেলাওয়াত, গোসল, পানি খাওয়া, তেল লাগানো – ঘুরে ফিরে এসব-ই তো করতে হবে। করুক।
সংযোজন (আব্দুল্লাহ ভাই):
চিকিৎসার সবচেয়ে জটিল দুইটা বিষয় হচ্ছে-
১। রোগ নির্ণয় করা
২। ডোজ নির্ণয় করা
রোগ কি সেটা যদি সে জানে, আর চিকিৎসা কি সেটা তো গ্রুপে লেখাই আছে। তাহলে আর হেল্প চাওয়ার কি দরকার!
You have to ask right questions for proper answers!
পোস্ট ৩ঃ
এদেশের অভিভাবকদের জাহালত সম্পর্কে ধারণা থাকার পরেও অভিভাবকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজের দুর্গকে সুরক্ষিত করতে চাওয়া জুলুম হবে কিনা সেই প্রশ্ন রইল নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়ারিশদের কাছে। আমি জাহেল মানুষ অত শত জানি না।
গত একটা স্ক্রিনশটে দেখিয়েছি কিভাবে একটা মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। সে স্বীকারও করেছে এই ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এখন এই মেয়েকে যদি ধরা হয়, আপনি মাদ্রাসায় পড়েও এমন কিভাবে হল, কেন আপনি পুরুষ লোক ছাড়া তার কাছে গেলেন, আপনার মা-ই বা কেমন মা। কবিরাজের কাছে আপনাকে একা রেখে চলে গেল!
তাহলে কেমন হবে?
একেকটা ঘটনায় একেক জনের রেসপন্স একেক রকম হবে। কারও কাছে এসব ঘটনা কেবল লজ্জাস্কর হবে, কেউ ট্রমায় চলে যাবে, আবার কেউ এনজয়ও করতে পারে।
কত শত ছেলে-মেয়ের মুখে শুনি, নিজের চোখেও দেখলাম, তারা যখন দ্বীন মানার চেষ্টা করতে থাকে তখন সবার আগে বাধা দেয় পরিবারের লোক। এই ইস্যুগুলো এতই কমন যে আলোচনা করাও লাগে না। বললেই হয়। আর অভিভাবক যদি অধীনস্থদের নিয়ে বিপদগ্রস্থ হয় তাহলে তার প্রথম চিন্তা থাকবে কিভাবে এই বিপদ থেকে বের হওয়া যায়। বের হতে গিয়ে কতটুকু বিবেচনাবোধ রাখতে পারবে, সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবে এটাও ভাবা দরকার। আজকে নামী-দামী রাকিদের অনেকেই একসময় রোগী নিয়ে কবিরাজদের কাছে দৌড়েছে, লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে, মাথার ঘাম ছুটিয়েছে। এমন না তারা শরীয়তের হুকুম জানতো না। জানতো, কিন্তু বিপদ তাদের দিশেহারা করেছে। এখন এসব বিষয় নিয়ে লজ্জা দেয়া, অযৌক্তিক প্রশ্ন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত চিন্তাশীলদের কাছে প্রশ্ন রইল।
অন্যায়কে অন্যায় মনে না করার শাস্তি হল, তওবা করার সৌভাগ্য হয় না। যে অন্যায়কে অন্যায় জেনে করে (বা না জেনে করে) সে যেকোনো সময় তওবা করতে পারে। কিন্তু যারা অন্যায়কে ন্যায় মনে করে সে তওবা করবে না। কারণ তার কাছেতো এটা অন্যায় না।
অভিভাবকরা নাহয় একসময় বুঝবে না, এটা সঠিক না। এটা ভুল। তওবা করে নিবে। কিন্তু যারা অভিভাবকদের গোড়া উদ্ধার করছে তাদের কি হবে?
মন্তব্য করুন