আশফিয়া – শিফাউন এর বহুবচন, যার অর্থ আরোগ্য। কোরআনুল কারিম এবং হাদিসে যেসব মেডিসিন এবং হার্বসকে শিফা এবং বরকতময় বলা হয়েছে, আমাদের এই ৭দিনের কোর্সটি হচ্ছে সেগুলোর একটি সম্মিলিত প্রয়োগ। এজন্যই এটার নাম রাখা হয়েছে ‘আল-আশফিয়া’ The Collection of cures!
এটি শাইখ আদিল বিন তাহির মুকবিল হাফিযাহুল্লাহুর দেয়া প্রেসক্রিপশন। উনার কাজই ছিল যাদুকরদের গ্রেফতার করে অথরিটির হাতে তুলে দেয়া আর যাদুর জিনিসপত্র ধ্বংস করা। অর্থাৎ ডিরেক্টর অব ডেস্ট্রয়িং ম্যাজিক!
আমাদের আলোচ্য প্রেসক্রিপশনটি বিশেষভাবে যাদু, জিন, বদনজর এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসাতে খুবই ফলপ্রসূ। কারও সমস্যা যদি অনেক প্রকারের কিংবা অনেক বেশি হয়, তখন সেটাকে একটা মাত্রায় আনার জন্য আমরা ডিটক্স সাজেস্ট করে থাকি। এছাড়া এই রুটিনটা “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রামে” প্রোগ্রামের মাঝেও প্রেসক্রাইব করা হয়েছে।
_____
নোট: এই ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ নিয়ে প্লেস্টোরে আমাদের একটি সুন্দর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ আছে। চাইলে দেখতে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে। লিংক- https://play.google.com/store/apps/details?id=org.ruqyahbd.detox
_____
আমাদের যা যা দরকার হবে –
১. পানি। সাড়ে তিন থেকে চার লিটার লাগে সাধারণত।
- জমজমের পানি হলে সবচেয়ে ভালো। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এর মাঝে শিফা আছে।
- নইলে বৃষ্টির পানি – আল্লাহ তা’আলা এটাকে বরকতময় বলেছেন।
- এসব না পেলে সাধারণ পানি – রাসূল স. সাধারণ পানিও রুকইয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন।
(জমজম বা বৃষ্টির পানি অল্প থাকলে বরকতের জন্য সাধারণ পানির সাথে মিক্স করা যেতে পারে)
২. অলিভ অয়েল। কোরআনুল কারিমে যাইতুনের তেলকে বরকতময় বলা হয়েছে। ১০০মিলি. হলে যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
- সবচেয়ে ভালো হয় মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হলে।
- নইলে এমনি সাধারণ ভালো কোন অলিভ অয়েল।
৩. মধু। ২৫০ গ্রাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মধুর মাঝে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে।
- যথাসম্ভব পিওর মধু। এক্ষেত্রে পরিচিত কারও থেকে বা নির্ভরযোগ্য অনলাইন শপের সহায়তা নেয়া যায়।
৪. কালোজিরা। ৫০গ্রাম। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শিফা।
- এটাও ভালো হওয়া উচিত, ব্যবহারের আগে সম্ভব হলে ময়লা ঝেড়ে ফেলা।
৫. তিলাওয়াতের জন্য কোরআন শরিফ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- বিশ্বাসীদের জন্য কোরআনের মাঝে শিফা এবং রহমত রয়েছে।
এসব যদি সংগ্রহ করা হয়ে যায়, তাহলে আমরা শুরু করতে পারি।
উপকরণগুলো হাতের কাছে রেখে নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন এবং সেগুলোতে ফুঁ দিন ।
১. সুরা ফাতিহা – ৭বার
২. আয়াতুল কুরসি – ৭বার
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস – সব তিনবার করে।
৪. সুরা বাক্বারা সম্পূর্ণ।
এক বসাতেই পুরাটা পড়ে শেষ করতে হবে এমন না, একবারে যতটুকু পারবেন পড়বেন, ফুঁ দিবেন। এরপর কোন কাজ থাকলে সেটা শেষ করে এসে বাকিটা পড়বেন, প্রয়োজনে দুই-তিন দিনে প্রস্তুত করবেন, এরপর কোর্স শুরু করবেন। সমস্যা নাই।
এসব পড়তে থাকুন আর মাঝে মধ্যে পানি, অলিভ অয়েল ফুঁ দিন। এরপর মধু ও কালোজিরায় ফু দিন। আপনি চাইলে এর সাথে রুকইয়ার আরও কিছু আয়াত (যেমন, কমন আয়াতগুলো অথবা আয়াতুশ শিফা) পড়তে পারেন, এটা ঐচ্ছিক।
এই স্টেপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করে থাকলে আপনি “সুস্থতার পথে ৭ দিন” প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য প্রস্তুত!
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১. ঘুমের আগে মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত, পুরো শরীরে রুকইয়া করা অলিভ অয়েল মালিশ করবেন (প্রথম ৩দিন)। পরের ৪দিন শরীরের যেসব যায়গায় ব্যথা আছে, শুধু সে জায়গাগুলোতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
২. তেল মালিশ করা হলে আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে এক চা চামচ মধু দিবেন। এর সাথে সাতটা কালোজিরা মিশিয়ে এটাকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটাকে শরবত না, বরং ঔষধ মনে করে খাবেন।
৩. পরেরদিন সকালে ভালোভাবে গোসল করবেন, এই গোসলের পানিতে এক গ্লাস রুকইয়ার পানি মিশিয়ে নিবেন।
(সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করতে মানা নেই, শীতকালে একটু বেলা হলে গোসল দিতে পারেন অথবা প্রয়োজনে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে পানি মেশাতে পারেন, কোন সমস্যা নেই।)
৪. সকালে গোসলের পর আবার আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে, ১ চামচ মধু এবং ৭টা কালোজিরা গুলিয়ে খেয়ে নিন। (রোজার দিনে সকালেরটা খাবেন সাহরির সময়ের শেষ দিকে)
এই কয়দিনে কি ঘটতে পারে?
১. প্রথম দিন হয়তো তেমন কিছুই অনুভব করবেন না। তবে কারো কারো প্রথম দিন থেকেই ইফেক্ট শুরু হয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দিন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন, প্রচণ্ড দুর্বল লাগবে। অথবা পুরো শরীর বা বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা হয়ে থাকবে। ভারি ব্যায়াম করলে যেমন ব্যথা হয়, সেরকম হতে পারে। চতুর্থ দিন থেকে সমস্যা কমতে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ, এবং ৭দিনের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে আল্লাহ চায়তো আপনি একদম ফ্রেশ হয়ে যাবেন।
২. এক নাগাড়ে কয়েক সপ্তাহ ডিটক্স রুকইয়া করা উচিত না। একবার করার পর কিছুদিন বিরতি দেয়া উচিত। তবে ৭দিনের যায়গায় ৮-১০দিন করতে সমস্যা নেই।
৩. যদি (আল্লাহ না করুক) ৭ দিন পরেও আপনার যথেষ্ট উন্নতি দেখা না যায়, তাহলে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সেলফ রুকইয়ার পরামর্শ ফলো করা, অথবা লাগাতার কয়েকমাস “সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” অনুসরণ করা।
৪. আপনার উচিত হবে এই কয়দিন নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে ইস্তেগফার করতে থাকা। প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করা। আর বেশি বেশি দোয়া করা, যেন সপ্তাহ শেষে আপনি একদম সুস্থ হয়ে যান।
৫. এই কয়দিন চাইলে “রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড” পেজ থেকে কোন কারির সাধারণ রুকইয়াহ শুনতে পারেন। নিজে তিলাওয়াত করলে আরও ভালো। সম্ভব হলে রুকইয়ার নিয়াতে প্রতিদিন সুরা বাক্বারার যতবেশি সম্ভব হয় তিলাওয়াত করুন অথবা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ইনশাআল্লাহ অনেক উপকার হবে।
৬. আর হ্যাঁ! এই রুটিন ফলো করার সময় একটা ডায়েরি বা নোটবুক রাখুন, খুব সংক্ষেপে আপনার অবস্থা নোট করুন। যেন প্রোগ্রাম শেষে সেটা আপডেট জানাতে পারেন।
৭. ডিটক্সে ব্যবহৃত পানি, তেল, মধু ইত্যাদি বেঁচে গেলে পরে এটা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন অথবা চাইলে এটা দিয়ে আবারও রুকইয়া করতে পারবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ এবং নিরাপদ রাখুন, আমিন।

#shortlink – https://ruqyahbd.tahzibinstitute.com/detox
ডিটক্স করা মধু ও অন্যান্য জিনিস ডিটক্সের পর বেশি হলে কি করনীয়?????
পরে রুকইয়া বা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
পিরিয়ড অবস্থায় কি ডিটোক্স ওয়াটার রেডি করা যাবে, অ্যাপ দেখে পড়ে???
না। এই সময় কোরআন পড়তে হাদিসে নিষেধ আছে।
বাট হাদিসে যে বলছে ” কোনো খাদ্যদ্রব্যে কোনো প্রকার ফু না দিতে” তাহলে এখন কি করব শাইখ?
আমার যতদূর মনে পড়ে হাদিসে তো সম্ভবতঃ শ্বাস ফেলার কথা আছে। দুইটা আলাদা না? তবুও সন্দেহ থাকলে ফুঁ না দিয়ে হালকা থুতু ছিটাবেন, তাহলেই ইনাফ। ফুঁ দেয়ার চেয়ে বরং সামান্য থুতুসহ দেয়া বেশি উপকারি। এটাকে ছুঃ বলা যায়!!
আসসালামু আলাইকুম
উল্লেখিত উপাদান গুলি একবার তৈরি করে তা দিয়ে একাধিক ব্যক্তি যার যার সমস্যার নিয়তে ব্যবহার করে কি উপকার পাবে, নাকি প্রত্যেকের আলাদা করে তৈরি করতে হবে?
ওয়ালাইকুমুসসালাম, একসাথে নিয়ত করে নিয়ে প্রস্তুত করলে ব্যবহার করা যাবে। তবে আলাদা আলাদা করলে ইনশাআল্লাহ বেশি উপকার হবে।
Assalamualikum.
Surah Baqara tu onek boro. Ami khub slow. Sesh korte pray 15-20 lagbe. Etodin lagle ki hobe?
ওয়ালাইকুমুসসালাম, অন্য কারও থেকে পড়ে নিতে পারেন।
নিজের বোঝার সুবিধার্থে সামারী করেছি। একটু বড় লেখা তো। অন্যদের জন্য দিলাম।।
ডিটক্স সামারী
পানি ৪লিটার
মধু ২৫০
কালোজিরা ৫০
অলিভ অয়েল ১০০
ফাতিহা ৭বার , আয়তুল কুরসী ৭বার , ৩ কুল ৩বার, বাকারা ১বার পড়ে পড়ে এগুলোতে ফু দিবেন
এরপর ৭দিন
১) শুনবেন / পড়বেন- বাকারা
২) ঘুমের আগে + গোসলের পর ২বেলা – আধা গ্লাস পানি + ১ চামচ মধু + ৭টা কালোজিরা খাবেন
৩) ঘুমের আগে অলিভ অয়েল সারা গায়ে মেখে নিবেন ১ম ৩দিন। পরের ৪ দিন শুধু ব্যাথার জায়গায় মাখবেন।
৪) সকালে সাবান দিয়ে, বালতিতে ১ গ্লাস পানি মিশিয়ে গোসল করবেন